হোমো স্যাপিয়েনস নিয়ে গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার

Wait 5 sec.

যুক্তি আর চ্যালেঞ্জ কোনোটাতেই পেরে উঠতে না পেরে শেষমেশ নগ্ন মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে বিজ্ঞানবাদি মহল। অমিত মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি এই কাজের আঞ্জাম দিয়েছেন। এনেছেন প্লেজিয়ারিজমের অভিযোগ। অথচ আমার বইতে রেফারেন্সই আছে ২৫ পৃষ্ঠার। এরপরও কেউ প্লেজিয়ারিজমের অভিযোগ তোলার মত কমনসেনসহীন হবে ভাবি নাই। অথচ অমিত সাহেবের পুরো লেখা পড়ে দেখলাম সেখানে অত্যন্ত নগ্নভাবে চেরি পিকিং ফ্যালাসি করে মিথ্যে অপবাদ দেয়া হয়েছে। নিজের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ইচ্ছেমত অংশ মুছে দিয়ে কমন বা সাধারণ আলোচনা – যেগুলো বিবর্তন নিয়ে লেখা যেকোনো বইতে পাবেন – সেটাকেও ভদ্রলোক প্লেজারিজম বানিয়ে ফেলেছেন!অমিত মণ্ডল প্লেজিয়ারিজমের সংজ্ঞায় লিখেছেন, Plagiarism হল, অন্য কারও কাজ বা লেখা বা গবেষণাকে মূল লেখকের নাম উল্লেখ ছাড়া এবং কোন কোন অংশ তার লেখা থেকে নেয়া সেগুলোর মেধাসত্ত্ব না দিয়ে সেগুলো নিজের নামে ব্যবহার করা বা নিজের নামে প্রকাশ করা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, প্লেজিয়ারিজম হচ্ছে মেধাচুরি, যেখানে অন্য কারও কাজ বা লেখাকে নিজের নামে ব্যবহার করা বা নিজের নামে প্রকাশ করা। তবে লেখক মূল লেখকের মেধাসত্ত্ব উল্লেখ করে যদি অনুবাদ বা ভাবানুবাদ করেন, সেটির ক্ষেত্রে এই অভিযোগ আরোপ করা যাবে না।এবার ছবিটা খেয়াল করুন। আমার বইয়ের একটা অংশ মার্ক করে অমিত সাহেব বলতে চেয়েছেন সেটা নাকি ইংরেজি বই Icons of Evolution এর বক্তব্যের সাথে হুবহু একই রকম। সুতরাং এটা প্লেজিয়ারিজম।অথচ ভালো করে খেয়াল করে দেখেন, আমার বইয়ের মার্ক করা অংশের পাশে লেখা (ডারউইন, ১৮৭১)। কিন্তু ইংরেজি বইটাতে এমন কিছু লেখা নেই। আমি ডারউইনের চিঠি পড়ে সেটা থেকে অনুবাদ করেছি এবং রেফারেনস বন্ধনীর মাঝে দিয়েছি, বইয়ের শেষে তথ্যসূত্র অংশে সেটা বিস্তারিত রূপে আছে। ডারউইন কথাই আমি উল্লেখ করেছি আমার বইতে, সরাসরি তার থেকে-যা মূলচিঠির আবেগী ভাবকেও তুলে এনেছে। ইংরেজি বইয়ের লেখক ডারউইনের কথা উল্লেখ করেছেন তার নিজের বইতে, সেটা সংক্ষেপে। দুইজনের উৎস এক-ডারউইন। সেই ডারউইনের সাইটেশান দেয়ার পরও সেটা প্লেজিয়ারিজম কীভাবে হয়? এইটুক কমন সেনসও নাইরে ভাই? এরপরও যদি কারো মাথায় না ঢুকে তাহলে প্রশ্ন আসে বিবর্তনভক্তদের প্রিয়পাত্র ড. আখতারুজ্জামানও কী চৌর্যবৃত্তি করেছেন!? তিনিও একই কথা উল্লেখ করেছেন তার বইতে! দেখুন:ড. আখতারুজ্জামানও কি চৌর্যবৃত্তি করেছেন? নাকি আমরা সকলেই একই উৎস থেকে উদ্ধৃত করেছি?এবার ২য় মার্ক করা অংশটা দেখেন, এই ভাষা ইংরেজি বইতে না পেয়ে দাগাতে পারে নাই। খেয়াল করুন, ২য় মার্ক করা অংশেও আমি বন্ধনীর মাঝে রেফারেনস দিয়েছি।অমিত সাহবে টাইটেল দিয়েছেন চৌর্যবৃত্তির নিদর্শন, কিন্তু ভেতরে বলেছেন, আমার বইতে ইংরেজি বইটির “স্টাইল থেকে অনুপ্রেরনা নেওয়া হয়েছে। এটা অবশ্য তেমন কিছু দোষের নয়। কত বড় বড় সুরকার বিদেশী গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই।” তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের গোড়ায় তো কুঠার আপনিই মেরে দিলেন। আমি Icons of Evolution পড়েছি, একই সাথে আরো অনেক কিছু পড়েছি যার রেফারেনস আছে বইয়ের শেষে প্রায় ২৫ পৃষ্ঠা জুড়ে। Icons থেকে যদি কিছু নিয়েও থাকি তাহলে সেটা মূল তথ্যসূত্র পড়ে বুঝে তারপর সেই প্রাইমারি লিটারেচার থেকে উদ্ধৃত করেছি। এটা যে প্লেজিয়ারিজমের কাতারে পড়ে না তা বুঝার মত মগজ কারো না কারো আছে আমার বিশ্বাস। তাছাড়া যে কেউ বইদুটো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বুঝে পড়লে সহজেই বুঝবে যে দুই বইয়ের রেফারেনসিং, কেন্দ্রীয় আর্গুমেন্টের ধরণ কতটা ভিন্ন।আরো মজার ব্যাপার হলো আমি তথ্যসূত্র উল্লেখ করলেও তারা সেটাকে হাইলাইট করেনি। অপারেন হ্যালডেনের এক্সপেরিমেন্ট একটা কমন নলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা। সেটাতে তথ্যসূত্র উল্লেখ না করলেও প্লেজিয়ারিজম হবে না, আমি তাও উল্লেখ করেছি। বাট গোয়েবলসীয় মিথ্যাবাদীরা দেখেও না দেখার ভান করেছে। ছবিতে দেখুন:উপরে অমিত মন্ডলের মুছে ঢেকে দেয়া ছবি, আর নিচে আমার বইয়ের উল্লিখিত অংশের ছবিতাদের দাবি যদি সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে তো জীববিজ্ঞান বই, ড. নিশীথ কুমার পালও চৌর্যবৃত্তি করেছেন, কারণ ইংরেজি বইয়ের সাথে লেখা মিলে যায়!এতটুকুতে থামলেও হত, তারা আমার বইয়ে ব্যবহৃত ছবির নিচে লেখা ছবিসূত্র মুছে দিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে মদন কুমার ছদ্মনামের এক ব্যক্তি। বামে আমার বইয়ের ছবি, মূল বইতে নিচে স্পষ্ট লিখা ছিল ছবিটা কার থেকে নেয়া। যিনি ছবি এঁকেছেন তার নাম মেনশান করা ছিল (তবে নামের বানানে টাইপ মিসটেক ছিল, জোডি জোগ্রেন হবে)। সেটা মুছে দিয়েছে এই মিথ্যেজীবিরা। দিয়ে বুঝাতে চাচ্ছে, আমি কার্টিসি দিই নাই। প্লেজিয়ারিজম করেছি। ছবিটি দেখুন।এবার বইয়ের মূলছবি দেখুন:আরেকটা ছবি দেখুন। এই গোয়েবলসীয় মিথ্যাবাদিদের লাইভে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমার বইয়ের থাকা ছবির নিচে লেখা আছে ছবিটা কোথা থেকে নেয়া হয়েছে। তারা আমার বই থেকে সেই রেফারেনস নিয়ে গুগল করে বই বের করে দেখাচ্ছে আর বলছে আমি নাকি উৎস উল্লেখ করি নাই। কতটা ডেসপারেট হলে মানুষ এমন মিথ্যাচার করতে পারে? এই মানুষগুলো লাইভে গিয়ে এইসব নির্জলা মিথ্যে বলে বেড়াচ্ছে। হিটলারের মন্ত্রী গোয়েবলসের মিথ্যাচার নীতি এরা খুব চৌকসভাবে বাস্তবায়ন করছে। আমার বইতে ব্যবহৃত প্রতিটা ছবির নিচে চিত্রকর/বই/পেপার তথা উৎস উল্লেখ করার পরও তারা এসব ছবিকে চুরি বলে চালিয়ে দিচ্ছে! তাই যদি হয় তাহলে:আমাদের সবার পরিচিত জাফর স্যার আরো বড় চোর, কপিরাইট লঙ্গনকারী কারণ তার বইতে কোনো ছবির নিচেই কোনো সূত্র উল্লেখ থাকে নারাবির প্রফেসর ড. নিশীথ কুমার পাল একজন চোর ও কপিরাইট লঙ্গনকারী, কারণ তার বিবর্তনবিদ্যা বইয়ের কোনো ছবির তথ্যসূত্র নাইঢাবির শিক্ষক ড. আখতারুজ্জামানও চোর ও কপিরাইট লঙ্গনকারী, কারন তার বিবর্তনবিদ্যা বইয়ে ব্যবহৃত অনেক ছবির কোনো সুত্র উল্লেখ নাইএকই রকম চোর ও কপিরাইট লঙ্গনকারী হলো বন্যা আহমেদ। তথ্যসূত্র দিলেও সেগুলার বেশকিছু লিংক নষ্ট। বাকি যে ছবি দিয়েছে তাও অনুমতি নিয়ে দেয় নি।একই অভিযোগ আনা যাবে বাংলাদেশের প্রায় সকল বিজ্ঞান লেখকের বইয়ের ব্যাপারে। এমনকি পাঠ্যপুস্তকের ব্যাপারেও। আরো মজার ব্যাপার আছে। নিজের গ্যাং নিয়ে আমাকে কুম্ভিলক প্রমাণের চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত আসিফ মহিউদ্দিন যে বহু আগে থেকেই মুক্তমনা মহলে চোর বলে পরিচিত তা কী জানেন? শাহবাগি মুক্তমনা নিঝুম মজুমদারের এক আর্টিকেলের প্রথম আমি জানতে পারি আসিফের চুরিনামা। নিঝুম লিখেছেন: [https://archive.ph/7Rr7a]পরে আমি অনুসন্ধান চালিয়ে সামু ব্লগে লেখাটা পাই [https://archive.ph/sYRjV]। ২০১২ সালে লিখা। লিখেছেন মুক্তমনা ব্লগার রুবাইয়্যাত আহসান। লেখাটা নতুন করে আপলোড করা হয়েছে এই সাইটে। [https://archive.ph/AM0Pk]কি অদ্ভূত তাই না? নিজের মহলে যে ব্যক্তি চোর হিসেবে পরিচিত তার উস্কানিতে অমিত মণ্ডল আমার নামে চুরির অপবাদ দিয়ে লাইভ করছেন? এটা কী আসলে হীনমন্যতা প্রসূত আচরণ? অমিত তাহলে একজন চোরের মুরিদ, পোষ্য? সময় পেলে অমিত মণ্ডলের গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারের পুরো তালিকার বিশ্লেষণ লিখবো। তবে মাথায় ঘিলু যাদের আছে তাদের জন্য এই একটা পোস্টই যথেষ্ট।